সারাদেশের ন্যায় গ্রাম পর্যায়ে জনগণের দোরগোড়ায় কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে স্থাপিত সুন্দরবন উপকূলীয় খুলনার কয়রা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আংটিহারা কমিউনিটি ক্লিনিকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলেন খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কয়রা জোনাল অফিস কর্তৃপক্ষ। এরফলে বিদ্যুৎ বিহীন অসহনীয় গরমের মধ্যে সেবা নিতে আসা নারী-শিশুসহ সর্বোস্তরের মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অপরদিকে বিদ্যুত বিহীন সেবা প্রত্যাশীদের কাঙ্খিত সেবা দিতে হিমসিম খাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরাও। যদিও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ এক মাস বিদ্যুৎ বিভাগের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলেও কার্যত পুনরায় বিদ্যুত সংযোগ যুক্তকরণে কোন ব্যবস্থা নেননি বলেও অভিযোগ করেছেন।
প্রতিবেদনের আগে সরেজমিনে আংটিহারা ক্লিনিকে গিয়ে জানা যায়, প্রায় এক মাস যাবত কমিউনিটি ক্লিনিকটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। সেখানকার বিদ্যুতিক মিটারটি গত ১১ সেপ্টেম্বর খুলে নিয়ে যায় খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কয়রা জোনাল অফিসের টেকনিশিয়ানরা। সেই থেকে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ বার বার বিদ্যুৎ অফিসের সাথে যোগাযোগ করেও পুনরায় বিদ্যুত সংযোগ স্থাপনে তারা কার্যত কোন ব্যবস্থাই নেননি।
সেবা গ্রহিতাদের আল মাহমুদ নামের একজন এ প্রতিনিক বজানান, ক্লিনিকে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকায় গরমে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। বিশেষ করে মা ও শিশুরাই বেশি কষ্ট পাচ্ছেন। ক্লিনিক ও বিদ্যুৎ অফিসের সাথে কি হয়েছে সেটা তারা জানেনা। তবে দুর্ভোগ ঠিকই সর্বসাধারণদের পোহাতে হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।
অবৈধ সংযোগের (টেম্পারিংয়ের) অভিযোগে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রেখেছেন দাবি করে কয়রা জোনাল বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম (চলতি দায়িত্ব) মোঃ কায়সার রেজা বলেন, ওই এলাকার আড়াই শতাধিক মিটারে টেম্পারিং করা হয়েছে। যা আমাদের আইন অনুযায়ি অবৈধ। তবে জনগণের দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে বিষয়টি দ্রুত নিস্পত্তির চেষ্টা করছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
এ ব্যাপারে আংটিহারা কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ্ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) সাধন কুমার সরকার জানান, কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪০-৫০ জন প্রসূতি মাসহ নানা ধরনের রোগী প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। প্রত্যাশিত সেবা পেলেও ক্লিনিকে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা না থাকায় রোগীদের গরমে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তারাও কষ্টের মধ্যে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন দাবি করে তিনি বলেন, ক্লিনিকটিতে গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা তিন দিন বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। এজন্য তিনি বিদ্যুৎ বিভাগের ফুলতলা স্টেশনের (হট লাইন) নম্বরে ফোন করে অবহিত করেন। এরপরে ১০ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন সংযোগের জন্য নাজমুল নামে একজনকে পাঠান। তিনি (নাজমুল) ক্যাবল লাইন চেক করার পরে সমস্যা না পেয়ে মিটার খুলে দেখেন। তবে মিটার খুলেও সংস্কার করতে না পেরে সংযোগ দিতে ব্যর্থ হন। পরের দিন (১১ সেপ্টেম্বর) বিদ্যুৎ অফিস থেকে টেকনিশিয়ানরা এসে মিটার খুলে নিয়ে যান। তখন তারা জানান মিটারে সমস্যা হয়েছে। পরে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষে জানানো হয় তিনি মিটারের বিল কমানোর জন্য টেম্পারিং করে রেখেছেন। অথচ তিনি কখনই মিটারে হাত দেইনি বলেও দাবি করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রেজাউল করিম জানান, বিদ্যুৎ বিভাগ তাকে কোন কিছুই অবহিত না করে মিটার খুলে নিয়ে গিয়েছে। তিনি সংশ্লিষ্ঠ স্বাস্থ্যকর্মীর মাধ্যমে বিষয়টি জানার পর বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য তার প্রতিনিধিকে কয়রা অফিসে পাঠিয়েছিলেন। তিনি জনদুর্ভোগের বিষয়টি ডিজিএমকে অবহিত করার পরেও তারা মিটারের ব্যবস্থায় কার্যত কোন পদক্ষেপ নেননি বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এটা যে সরকারী প্রতিষ্ঠান এটাও সেখানকার ডিজিএম মানতে চান না। বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে তিনি অবহিত করেছেন দাবি করে বলেন, মিটার পরীক্ষা করা এবং খুলে নেয়ার কাজ বিদ্যুৎ বিভাগের লোকই করেছেন।টেম্পারিং থাকলে ঐ সময় তাকে অবহিত না করে কোন চাক্ষুষ প্রমাণ ছাড়াই মিটার নিজেদের অফিসে নিয়ে পরবর্তীতে টেম্পারিং এর অভিযোগ কতটা যুক্তি সংগত সে ব্যাপারেও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
সর্বশেষ বিদ্যুত বিভাগের পক্ষে স্বাস্থ্যকর্মীর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ঠ স্বাস্থ্যকর্মীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিবেন জানিয়ে মিটারের বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে কথা বলে বিষয়টির সমাধানের চেষ্ঠা করছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
ওয়েবসাইট নকশা প্রযুক্তি সহায়তায়: ইন্ডিপেন্ডেন্টবিডি আইটি টিম