খুলনার ডুমুরিয়ায় গুটুদিয়া এসিজি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র নিরব (১২) হত্যার ঘটনায় নিতের মামা উপজেলার হাজীডাঙ্গা এলাকার মৃত দেব দুলাল জোদ্দারের ছেলে বিশ্বজিৎ জোদ্দার বাদী হয়ে আটক স্কুল ছাত্রসহ ৫ জনকে আসামী করে ডুমুরিয়া থানায় একটি মামলা করেছেন। যার নং-৩, তারিখ ৩/২/২৩, ধারা- ২০২৩ নারীর শিশু নির্যাতন দমন আইন এর ৮সহ বাংলাদেশ দন্ডবিধি ৩০২, ২০১ ও ৩৪।
এদিকে হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে আটককৃত আসামিরা। তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-২ এর বিজ্ঞ বিচারক রনক জাহান। আদালত সূত্র জানায়, শুক্রবার বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ৫ জন আসামিকে পর্যায়ক্রমে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জাবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। জবানবন্দি গ্রহনের পর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় আসামীদের আজ শনিবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) সংশোধনাগারে পাঠানো হবে বলে জানায় পুলিশ।
এর আগে ডুমুরিয়া থানা পুলিশ উপজেলার গুটুদিয়া এসিজিবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবন থেকে একই বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র নিরব মন্ডল (১২) এর লাশ উদ্ধার হয়। সে গুটুদিয়ার শেখর মন্ডলের ছেলে। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে স্কুলে বেরিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি। দুপুর দেড়টায় স্কুল ছুটি হলেও সে বাড়ি না ফেরায় তার মা বিষয়টি তার বাবা শেখরকে ফোনে জানায়। এরপর সম্ভাব্য বিভিন্ন জায়গায় খোঁজা-খুঁজির একপর্যায়ে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ০১৮৬২-০৯০১৮১ নম্বরের মোবাইল থেকে অজ্ঞাত পরিচয ব্যক্তি শেখরের ব্যবহৃত ০১৭২১-৮৫৩০৬২ নম্বর মোবাইলে ফোন করে জানায় যে, তার ছেলে নিরব তাদের হেফাজতে রয়েছে, তাকে পেতে হলে তাদেরকে ৩০ লক্ষ টাকা দিতে হবে।
এরপর তারা খোঁজা-খুঁজির পাশাপাশি বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করেন। পুলিশ উন্নত প্রযুক্তির সহায়তায় ঐ দিন রাত পৌনে ১১ টার দিকে উপজেলার গুটুদিয়া থেকে মোবাইল ব্যবহারকারী মো: সোহেল মোল্লা (১৪) কে আটক করে। এসময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনায় তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে অপর ৪ সহযোগী জিলের ডাঙ্গার পংকজ মন্ডলের ছেলে পিতু মন্ডল (১৪), গুটুদিয়ার প্রকাশ রায়ের ছেলে ও একই বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্র হিরক রায় (১৫), তেলিখালীর অনিমেষ রায়ের ছেলে পিয়াল রায়(১৫) ও গুটুদিয়ার ক্ষিতিশ মন্ডলের ছেলে দ্বীপ মন্ডল (১৩) এর জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
এসময় তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে ভারতীয় টিভি চ্যানেল সনি-৮’র ক্রইম পেট্রোল দেখে মুক্তিপণ পাওয়ার আশায় নিরব মন্ডলকে অপহরণের কথা স্বীকার করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা হিরক রায়কে নিরবের বাবা শেখরের মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহরে দায়িত্ব দেয়। এরপর দুপুর দেড়টার দিকে নিরবের স্কুল ছুটি হলে পিয়াল কৌশলে নিরবকে বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ঐ টিনসেডের ঘরে নিয়ে যায়। এরপর তারা সেখানে তাকে সিলিংয়ের সাথে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে তাকে সেখানে ফেলে ঘরে তালাবদ্ধ অবস্থায় রেখে বেরিয়ে বেলা সাড়ে ৩ টার দিকে মুক্তিপণের দাবিতে মোবাইল করে।
আটকের পর রাত দেড়টার দিকে তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয়দের উপস্থিতিতে পরিত্যক্ত ঘর থেকে পিঠে স্কুল ব্যাগসহ উপুড় করা অবস্থায় নিরবের লাশ উদ্ধার হয়।
ডুমুরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ সেখ কনি মিয়া বলেন, চাঞ্চল্যকর স্কুল ছাত্র নিরব হত্যায় তার মামা বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। শুক্রবার আদালতে ঘটনায় তাদের দায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের পর কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
ইন্ডি;/লিটন
ওয়েবসাইট নকশা প্রযুক্তি সহায়তায়: ইন্ডিপেন্ডেন্টবিডি আইটি টিম