শেখ নাদীর শাহ্::
খুলনার পাইকগাছায় বিভিন্ন মৌজায় জমির সরকার নির্দ্ধারিত মূল্যবৃদ্ধির কারণে ক্রয়-বিক্রয় আশংকাজনকহারে হ্রাস পেয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের দূর্ভোগ-দূর্দশার পাশাপাশি নিয়মিত রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। জমির গড় মূল্য নির্দ্ধারণে পূণ:বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন ভূক্তভোগীদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীরা।
জানাগেছে, সুন্দরবন উপকূলীয় পাইকগাছা সাব:রেজিস্ট্রি অফিসের আওতাধীন জমির ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে মৌজাওয়ারী গড় মূল্য কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে জমির ক্রয়-বিক্রয় রেজিস্ট্রি আশংকাজনক হ্রাস পেয়েছে। জরুরী প্রয়োজনে জমি বিক্রি করতে ক্রেতার অনাগ্রহে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। ১ জানুয়ারী থেকে নতুন নির্ধারিত মূল্য কার্যকর হওয়ার পর থেকে এ খাতে সংকট দৃশ্যমান হয়েছে। কেনা-বেচা কমে যাওয়ায় রেজিস্ট্রি অফিসে অলস সময় পার করছেন সংশ্লিষ্টরা ফলে সরকারও নিয়মিত রাজস্ব আয়ের খাত থেকে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে।
সূত্র জানায়, উপজেলার সব মৌজার জমির মূল্য বৃদ্ধি পেলেও ১১ টি মৌজার গড় মূল্য কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এসব মৌজার গড় মূল্য পুনঃবিবেচনার মাধ্যমে কমানোর দাবি জানিয়েছেন এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী পাইকগাছা সাব-রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানায়, প্রতি দুই বছর অন্তর মৌজাওয়ারী জমির গড় মূল্য নির্ধারণ করা হয়। সে হিসেবে পহেলা জানুয়ারি থেকে নতুন নির্ধারিত মূল্য কার্যকর হয়। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় জমির মূল্য নির্ধারণ করে থাকলেও এবার দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে জেলা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় থেকে জমির গড় মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূল্য নির্ধারণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। তারা মূলত জমির সর্বশেষ বাজার মূল্য নির্ধারণ কমিটিতে জমির ক্রয়-বিক্রয়ে প্রকৃত ও সঠিক অবস্থান তুলে ধরতে পারে। এবার তাদেরও দৃশ্যমান অবস্থান না থাকায় প্রতিটি মৌজার শ্রেণি ভিত্তিক প্রতি শতাংশ জমির গড় মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, মূল্যবৃদ্ধির অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে জমি রেজিস্ট্রিতে গ্রহিতাদের একটি বড় অংশ প্রিয়নশনের শঙ্কায় স্বাভাবিক বাজার মূল্যের চেয়েও অধিক মূল্য দলিলে উল্লেখ করেন। অনেকে সরকারি অধিগ্রহণের টাকা বেশি প্রাপ্তির আশায় অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করেন। এমন নানা কারণে ২০২৫-২৬ সনে মৌজাওয়ারী জমির গড় মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে।
উপজেলার মৌজাগুলেরার মধ্যে সরল, আরাজী ভবানীপুর, কপিলমুনি, কাশিমনগর, গোপালপুর, চাঁদখালী, নগর শ্রীরামপুর, নাছিরপুর, বাতিখালী, শিবেরবাটী, ও পাইকগাছাসহ ১১ টি মৌজার গড় মূল্য কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, জমির গড় মূল্যের উপর দলিল খরচ নির্ভর করে। বিধায় এসব মৌজার জমি ক্রয়-বিক্রয়ে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। রাস্তার পাশে অথবা বাণিজ্যিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং লোকালয়ের জমির স্বাভাবিক মূল্যের ব্যাপক তারতম্য রয়েছে। এসব এলাকার জমির চাহিদাও বেশি। এ কারণেও কেনা-বেচায় ভোগান্তিতে পড়েছে অনেকেই।
কপিলমুনির প্রতাপকাটী এলাকার জনৈকা নারী জানান, তিনি ২৫ কাঠা জমি ক্রয় করতে দাতার সাথে ৯ লক্ষ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। তবে নতুন নির্ধারিত গড় মূল্যের কারণে দলিল খরচসহ তার জমির মোট মূল্য ৩০ লক্ষ টাকা হচ্ছে। ফলে ইচ্ছা স্বত্ত্বেও জমি ক্রয় করতে পারছেননা তিনি। তার মতো অনেকেই জমি কেনা-বেচা করতে পারছেন বলে অভিযোগ তার।
১ জানুয়ারি থেকে নতুন নির্ধারিত মূল্য কার্যকর হওয়ার পর এমন যাতাকলে জমি ক্রয়-বিক্রয়ে অনিচ্ছা তৈরি হয়েছে। পক্ষান্তরে জমির স্বাভাবিক রেজিস্ট্রি কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় সরকারও নিয়মিত রাজস্ব খাত থেকে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছেন।
পাইকগাছা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় সূত্র জানায়, এর আগে যেখানে প্রতিদিন অন্তত ৪০ থেকে ৫০ টি দলিল সম্পাদন হতো, বর্তমানে সেখানে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ টি দলিল সম্পাদন হচ্ছে। জমির ক্রয়-বিক্রয় খাতটিকে স্বাভাবিক রাখতে এবং সরকারের রাজস্ব ত্বরান্বিত রাখতে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ চিহ্নিত ১১টি মৌজার ২০২৫-২৬ সনের নির্ধারিত গড় মূল্য হ্রাসে পুনঃ বিবেচনার জন্য পাইকগাছা সাব-রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত আবেদন করেছে।
এ ব্যাপারে তারা সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান।