নিজস্ব প্রতিবেদক:
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি ইউপির সচিব গণি গাজীর বিরুদ্ধে পরিষদের সদস্যসহ সেখানকার সেবা গ্রহিতাদের সাথে অসদাচারণ এবং অর্থ আত্মসাতের একাধিক ঘটনায় ইউএনও, জেলা প্রশাসকসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ১০ জন সদস্যের লিখিত অভিযোগের বরাদ দিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর প্রকাশে দৌড়-ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন অভিযুক্ত সচিব। নিজেকে ধোয়া তুলশীর পাতা সাজাতে অভিযোগকারী সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, অভিযুক্ত সচিব গণি গাজী গত সরকারের শাসনামলে আওয়ামী লীগের মনোনীত ইউপি চেয়ারম্যান কওছার আলী জোয়াদ্দারের দোসর হিসেবে এবং সাবেক ভূমি মন্ত্রীর লোক হিসেবে বিভিন্ন স্থানে নিজেকে জাহির করলেও অভ্যুত্থান পরবর্তী রাতারাতি ভোল পাল্টে ধোয়া তুলশীর পাতা প্রমানে মালিশ শুরু করেছেন। এমনকি সাংবাদিক ম্যানেজে মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন তারই অনুসারী মহল বিশেষ কতিপয় ব্যক্তিরা।
এদিকে মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারী) সকালে সচিবের বিরুদ্ধে ইউনিয়নবাসীর পক্ষে পরিষদের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়েছে। দীর্ঘ দিন একই স্থানে অবস্থান করায় বিভিন্ন সময় তার অসদাচারণ ও অর্থলিপ্সুতার শিকার ভূক্তভোগীরা এ মানববন্ধন কর্মসূচীতে অংশ নেন। এসময় তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের প্রতি বিষয়টির তদন্তপূর্বক শাস্তি দাবি করেন।
অভিযোগে জানানো হয়, দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর ধরে কপিলমুনি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ও সর্বশেষ অতিরিক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে দায়িত্বে থেকে মোঃ আব্দুল গনি গাজী পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মেম্বর, গ্রাম পুলিশ ও পরিষদে আগত নাগরিক সেবা নিতে আসা সাধারণের সাথে রীতিমত রুক্ষè ব্যবহার ও অসদাচারণ করেন। জনগণের প্রত্যক্ষভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি কাউকে ন্যুনতম মূল্যায়ন করেননা। গ্রাম পুলিশদের সাথে আরোও খারাপ ব্যবহার করেন। সামান্য ত্রুটিতেও সাধারণের সামনে তাদেরকে বাথরুমে আটকে রাখার হুমকি পর্যন্ত দিয়ে থাকেন। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করলে ইউপি সদস্যদেরকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।
সর্বশেষ ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর চেয়ারম্যান মামলায় জড়িয়ে গ্রেফতার এড়াতে পলাতক থাকায় ইউপির সকল সদস্যরা সম্মিলিতভাবে সিনিয়র সদস্য প্যানেল চেয়ারম্যান ইউনুস আলী মোড়লকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দিলে প্রশাসনিকভাবে তাকে দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে অনুমোদন দেয়। মূলত এরপর থেকেই গাত্রদাহ শুরু হয় সচিবের। পরিষদের কতিপয় কর্মচারীকে কব্জাগ্রস্ত করে অর্থ আতœসাতের নতুন খেলায় মত্ত হন তিনি। বিশেষ করে ট্রেড লাইসেন্স ও ট্যাক্সসহ বিভিন্ন খাতে আদায়ের টাকা কোন প্রকার হিসাব-নিকাষ ছাড়াই নিজে আতœসাৎ করছেন বলে অভিযোগে বলা হয়।
দীর্ঘ দিন যাবত একই পরিষদে থাকার দরুণ এলাকায় বাড়ি করে স্থায়ী বসবাস করেন। পাশের গ্রামে শ্বশুরবাড়ি থাকায় জনপদের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে সখ্যতা গড়ে নিজেকে ধরাকে সরাজ্ঞান মনে করে থাকেন।
সদস্যদের অভিযোগ, বছরের বিভিন্ন সময় বাস্তবায়িত পরিষদের সকল কার্যক্রমসহ উন্নয়ন কর্মকান্ডে নিজের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করেন। যার ধারাবাহিকতায় পরিষদের ইউপি সদস্য- সদস্যাদের সাথে অসদাচরণ এমনকি নাগরিক সেবা গ্রহিতাদের সাথে বিভিন্ন সময় রূঢ় আচারণ ও ঝগড়া-বিবাদেও জড়াতে দেখাতে দেখা যায়। সাধারন নাগরিক প্রশাসনিক কর্মকর্তার এহেন ব্যবহারে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে ইউপি সদস্যদের কাছে নানাবিধ অভিযোগও করেন।
জানাযায়, এরআগে উক্ত সচিবের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক অভিযোগ করেন ঘটনার শিকার সাধারণরা। যাদের একজন আব্দুস সাত্তার এ প্রতিনিধিকে জানান, নাগরিক সেবা পেতে অর্থনৈতিক লেনদেন সংক্রান্তে তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগে তিনি উপজেলার দপ্তরে লিখিত মুচলেকায় সেবার পরিত্রাণ পান। তবে কিছুদিন পরেই ফের পুরনো রুপে ফিরে যান তিনি।
নাগরিক সেবা নিতে পরিষদে উপস্থিতিদের অধিকাংশদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কাজ করেন তিনি। টাকা না দিলে নানা অজুহাতে হয়ারণির শিকার হতে হয় সংশ্লিষ্ট সেবা গ্রহীতাদের। এমন নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এমনকি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে যোগসাজশে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখিয়ে তার অর্থ ভাগবাটোয়ারা করে নেন তিনি।
ইউনিয়নবাসী ও জনপ্রিতিনিধিরা স্থানীয় সরকার পরিষদ থেকে তৃণমূলের সাধারণ মানুষকে সকল প্রকার নাগরিক সেবা সুষ্ঠুভাবে পৌছে দিতে অভিযোগের তদন্তপূর্বক শাস্তি কামনা করেন তারা।
অভিযোগকারী জনপ্রতিনিধিরা হলেন, পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও প্যানেল চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ আলী, ইউপি সদস্য শেখ রবিউল ইসলাম, মোঃ আজিয়ার রহমান, রবীন্দ্রনাথ অধিকারী, মোঃ আলাউদ্দীন গাজী, এ এস এম মোস্তাফিজুর রহমান, রাজিয়া সুলতানা, মোঃ বদরুল আলম, কাকুলি বিশ্বাস ও ছখিনা বেগম। (চলবে)